Header Ads

মুমিনুল-লিটনের বীরত্বে চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার চট্টগ্রাম টেস্ট নিষ্প্রাণ ড্র হয়েছে। রোববার প্রথম টেস্টের শেষ দিনে ম্যাচ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার চেয়ে ১১৯ রানে পিছিয়ে খেলা শুরুর পর মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি ও লিটন কুমার দাসের ৯৪ রানে ভর করে ১০৭ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। এরপর দিনের খেলা ১৭ ওভার বাকি থাকতেই ড্র মেনে নেয় উভয় দল। দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা হয়েছেন মুমিনুল হক।


পাঁচ দিনে ২৪ উইকেট পতনের মধ্য দিয়ে ১৫৩৩ টি রান হয়েছে চট্টগ্রাম টেস্টে।

স্কোর: বাংলাদেশ ৩০৭/৫ (১০০ ওভারে)
ব্যাটিং: মাহমুদউল্লাহ ২৮*, মোসাদ্দেক ৮*।
লিড: ১০৭ রান।
ফল: ম্যাচ ড্র
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুমিনুল হক

পরিস্থিতি ছিল প্রতিকূল, সঙ্গী সেখানে শঙ্কা। পেছনে অনেকবার ব্যর্থতার ইতিহাস। সামনে পরাজয়ের চোখ রাঙানি। সেই বিরুদ্ধ স্রোতেই তরী বেয়ে দলকে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় নিয়ে গেলেন মুমিনুল হক। নিজে গড়লেন ইতিহাস, বাঁচালেন ম্যাচ।

ম্যাচ বাঁচানো দুর্দান্ত জুটিতে মুমিনুলের সঙ্গী লিটন দাস। যদিও হাতের মুঠো থেকে প্রাপ্য সেঞ্চুরিটি ফেলে দেওয়ার আক্ষেপে পুড়েছেন। তবে দলের প্রাপ্তির চেয়ে বড় তৃপ্তি তো আর হতে পারে না! দিন শেষে তাই লিটনের মুখে হাসিই থাকার কথা। খুশির হাওয়া ড্রেসিং রুম জুড়েই। শঙ্কার মেঘ সরিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ।

৩ উইকেটে ৮১ রান নিয়ে রোববার শেষ দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ইনিংস পরাজয় এড়াতেই প্রয়োজন ছিল তখনও ১১৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ৩০৭ রান তোলার পর ড্র হয় ম্যাচ। দুই অধিনায়কের সম্মতিতে ১৭ ওভার আগেই শেষ হয় খেলা।

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির অনন্য কীর্তি গড়েছেন মুমিনুল। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে লিটন ফিরেছেন আত্মঘাতী শটে।

শেষের মত লিটনের শুরুটাতেও ছিল অস্থিরতার ছাপ। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই রঙ্গনা হেরাথকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়েছিলেন। একই চেষ্টা করেছিলেন খানিক পরে আবার। তবে শুরুর সেই অস্থিরতা কেটে যাওয়ার পর খেলেছেন দারুণ। ছন্দে থাকলে তিনি দারুণ স্টাইলিশ। সেই নান্দনিকতার ছাপ ছিল এদিন।

মুমিনুল শুরু থেকেই সাবলীল। ব্যাটিংয়ে ছিল না চাপের রেশ, দেখা যায়নি অস্থিরতার লেশ। উইকেটে তার উপস্থিতিই ছিল যেন নির্ভরতার প্রতিচ্ছবি।

বড় ভয় ছিল প্রথম সেশন নিয়ে। মুমিনুল ও লিটন নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন প্রথম সেশনও। প্রথম ইনিংসে ২০০ রানে পিছিয়ে থাকার ঘাটতি পুষিয়ে বাংলাদেশ লিড নেয় লাঞ্চের পর পরই।

দ্বিতীয় সেশনের মাঝামাঝি মুমিনুলের হাতে লেখা হয়ে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়। প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের পর সেঞ্চুরি করলেন আবারও। তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ১৫৪ বলে।

বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়লেন জোড়া সেঞ্চুরির ইতিহাস। তামিম ইকবালের ২৩১ রান ছাড়িয়ে এক টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখন মুমিনুলের।

তবে এবার বড় হয়নি সেঞ্চুরিটি। ১০৫ রানে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে।

বাংলাদেশ ততক্ষণে অনেকটাই নিরাপদ আশ্রয়ে। লিটনের সঙ্গে ৫০ ওভারের বেশি একসঙ্গে উইকেটে থেকে ১৮০ রানের জুটিতেই লেখা হয়ে গেছে শেষ দিনের ভাগ্য।

এরপর ছিল ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার হিসাব, যেটি মেলাতে পারেননি লিটন। দায় নিজেরই। ৯৪ রান থেকে তার ইচ্ছে হয়েছিল ছক্কা মেরে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়ার। পেলেন উল্টো স্বাদ। হেরাথের বলে দারুণ ক্যাচ নিলেন দিলরুয়ান পেরেরা।
তবে লিটনের শেষটাই সব নয়। তিন টেস্টে তিন বার বল ছেড়ে দিয়ে আউট হওয়া, শেষ দিনের চাপ, সব সামলে ম্যাচ বাঁচানোয় তার অবদানটাই নিশ্চয়ই বেশি মনে রাখবে দল।

মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক এরপর শেষ করেছেন আনুষ্ঠানিকতা। ৩২তম জন্মবার্ষিকীতে দলের হার এড়ানোর খুশিটা উইকেটে থেকেই উপহার পেয়েছেন এই ম্যাচের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ ম্যাচ শেষ করেছে স্বস্তিতে।

শেষ দিনে লড়াই করে ম্যাচ বাঁচানোর আগে খুব বেশি পারেনি বাংলাদেশ। এই টেস্ট তাই থাকবে সামনে এগিয়ে চলার পাথেয় হয়ে। হয়তো তার চেয়েও বেশি করে মনে থাকবে, মুমিনুলের টেস্ট হিসেবে!
Powered by Blogger.